বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৮ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্কঃ লাখ লাখ ভক্তকে কাঁদিয়ে দীর্ঘ দিনের প্রিয় কর্মস্থল হাটহাজারী মাদ্রাসার ‘মাকবারাতুল জামিয়া’য় সমাহিত হয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ২টা ১৫ মিনিটে হাটহাজারী ডাক বাংলো চত্বরে তার জানাজা সম্পন্ন হয়।
তার দীর্ঘ দিনের প্রিয় কর্মস্থল হাটহাজারীর ‘বড় মাদ্রাসা’ হিসেবে পরিচিত আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলামের মাঠ প্রাঙ্গণে স্থান সংকুলন না হওয়ায় ডাক বাংলো চত্বরে জানাজার নাম সম্পন্ন হয়।
জানাজার নামাজের ইমামতি করেন তার বড় ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসূফ। জানাজার আগে তিনি উপস্থিত লোকজনসহ দেশবাসীর কাছে তাঁর বাবার জন্য দোয়া চান।
লাখো জনতার অংশগ্রহনে জানাজা নামাজ শেষে আল্লামা শফীর ওসিয়ত অনুসারে তার প্রিয় মাদ্রাসার বাইতুল আতিক জামে মসজিদ সংলগ্ন ‘মাকবারাতুল জামিয়া’ নামক কবরস্থানে চিরঘুমে শায়িত করা হয়।
স্মরণকালের সবচেয়ে বড় এই জানাজায় আলেম, রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ জনতা অংশ নেন।
এ সময় শতবর্ষী আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সহকর্মী, ছাত্র, ভক্ত ও অনুসারীসহ জানাজায় আসা সকলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
জানাজা উপলক্ষে এলাকাজুড়ে বাড়ানো হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা। নিশ্চিন্দ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৬ শতাধিক র্যাব ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয় হাটহাজারী, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়িতে।
এছাড়াও ৪ উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেন ৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট।
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ফরিদাবাদ মাদ্রাসা থেকে রওনা হয়ে সকাল ৯টায় আল্লামা শফীর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি হাটহাজারীতে এসে পৌঁছায়। এরপর মাদ্রাসার অদূরে কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ সংলগ্ন তার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে ২৫ মিনিটের মত লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি অবস্থান করে। এ সময় তার আত্মীয়-স্বজনরা তাকে এক নজর দেখে নেয়। তারপর নেওয়া হয় প্রায় ৭৪ বছরের প্রিয় কর্মস্থল হাটহাজারী মাদ্রাসায়।
এ সময় ছাত্র, সহকর্মী, ভক্ত ও অনুসারীসহ উপস্থিত সবাই শেষবারের মত তাদের প্রিয় হুজুরকে দেখার জন্য ভিড় জমায়। ওই সময় মূল ফটক দিয়ে মাদ্রাসার ভিতরে প্রবেশের সময় ভিড়ের চাপে পড়ে ৮-১০ আহত হয় বলে জানা গেছে।
এদিকে জোহরের নামাজের আগে হেফাজতের মহাসচিব ও মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীসহ মাদ্রাসার কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।
এ সময় মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক মাওলানা শেখ আহম্মদসহ আরও কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক বক্তব্য রাখেন।
এতে আল্লামা বাবুনগরী বলেন, আমার শিক্ষক ও সবার মুরব্বি আল্লামা আহমদ শফি চলে যাওয়াতে আমাদের কওমী অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তবে অচিরেই হুজুরের রেখে যাওয়া কর্মসূচিকে সামনে রেখে হেফাজত ও হাটহাজারী মাদ্রাসাকে আমরা সকলে এগিয়ে নিয়ে যাব। এজন্য আপানাদের সকলের সহযোগিতা ও ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
এদিকে প্রবীণ এ আলেমের মৃত্যুর খবরে গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে সর্বস্তরের জনতা ভিড় করে। রাত থেকেই চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন হাটহাজারীতে আসতে শুরু করে ‘বড় হুজুরকে’ একনজর দেখতে।
ভোর থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাস-মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন নিয়েও হাটহাজারীতে লোকজন আসতে থাকেন। তবে সকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহীনির সদস্য জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক বন্ধ করে দেয়। ওই মাদ্রাসার আশপাশের এলাকা এখন লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে।
সুদূর সিলেট থেকে এসেছেন মাওলানা মো. আবদুল গফুর। নিজেকে সাবেক ছাত্র পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, হুজুরকে শেষবারের মতো একবার দেখতে সিলেট থেকে এসেছি। দেরিতে আসলে দেখতে পাবো না। তাই সকাল সাড়ে ১০টার আগেই মাদ্রাসায় চলে এসেছি। তিনি আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন। আমাদের কওমি অঙ্গনের অভিভাবক ছিলেন।
তার মতো একই কথা জানিয়েছেন আবু হুরাইরা। তিনি বলেন, আমি সরাসরি হুজরের ছাত্র ছিলাম না। এইখান থেকে হেফজ বিভাগ থেকে পড়েছি। ২০০১ সালে মাদ্রাসা থেকে গিয়ে এখন অন্য একটি মাদ্রাসায় পড়াই। হুজুর মারা গেছেন শুনে সব কিছু বাদ দিয়ে চলে আসছি।
অন্যদিকে জানাজায় অংশগ্রহন করেন হাটহাজারী থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, গাজীপুরের মেয়র অ্যাড. জাহাঙ্গীর আলম, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বদিউল আলম, চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার রশিদুল হক, র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল মশিউর রহমানসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশে অনেকের কাছেই আহমদ শফী এবং ‘হেফাজতে ইসলাম’ সমার্থক শব্দের মতো।
২০১৩ সালে ঢাকার শাপলা চত্বরে সমাবেশের পর হেফাজতে ইসলাম নামটি ব্যাপকভাবে পরিচিত পেতে শুরু করে। মূলত আল্লামা আহমদ শফীর জনপ্রিয়তার কারণেই হেফাজত দেশের রাজনীতিতে এতটা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠে।
১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেন আহমদ শফী। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে ছিলেন।
লেখালেখিতেও রয়েছে তার রয়েছে বিশেষ অবদান। বাংলা ও উর্দু ভাষায় তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৫টি।
Leave a Reply